অবাধে ভেজাল খাদ্যের বিক্রিতে জনস্বাস্থ্যের হুমকি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশে ভেজাল ও বিষাক্ত খাবারের অবাধ বিক্রি জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব ভেজাল খাদ্যের কারণে দেশে ক্যান্সার, কিডনি রোগ, লিভারের সমস্যা, পেটের অসুখ, ডায়াবেটিস এবং শিশুদের অপুষ্টির হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের গবেষণা অনুযায়ী, দেশে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে, এবং এর অন্যতম কারণ খাদ্যে রাসায়নিক দূষণ।

খাদ্যসামগ্রীতে মেশানো হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক, যা মানবদেহের জন্য বিপজ্জনক। দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যতে ফরমালিন, ডিটারজেন্ট ও হাইড্রোজেন পারক্সাইড মেশানো হচ্ছে। অপরিপক্ব ফল পাকাতে ক্যালসিয়াম কার্বাইড ও ইথোফেন ব্যবহৃত হচ্ছে, আর মাছ ও মাংস সংরক্ষণে ব্যবহার করা হচ্ছে ক্ষতিকর রাসায়নিক। এসব ভেজাল খাদ্যজনিত কারণে জীবন বাঁচানোর খাবারই বিপদ ডেকে আনছে এবং বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করছে।

রমজান মাসে বিভিন্ন সংস্থা খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অভিযান শুরুর ঘোষণা দিলেও বাস্তবে এর প্রভাব বাজারে তেমন দেখা যাচ্ছে না। বিএসটিআই এবং অন্যান্য বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানায়, রাজধানীতে রাস্তার পাশে বিক্রি হওয়া চটপটি, ছোলামুড়ি, স্যান্ডউইচ, আখের রস, অ্যালোভেরা সরবত ও রেস্তোরাঁর সালাদে প্রাণঘাতী ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের উপস্থিতি রয়েছে। এছাড়া, প্যাকেটজাত বা প্যাকেটহীন খাবারে কোনোভাবেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।

গবেষণা জানায়, রমজান মাসে রাস্তার ধুলোবালি মিশে খাদ্যপণ্যে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করছে। প্যাকেটজাত খাবারের মেয়াদও বেশি দেওয়া হচ্ছে, যার ফলে তা থেকে ক্ষতিকর ছত্রাক জন্ম নিচ্ছে। এমনকি পুরনো পাউরুটি ফেরত নিয়ে নতুন পাউরুটি তৈরি করা হচ্ছে। তবে এই সমস্যাগুলো প্রতিদিনের বাজার মনিটরিংয়ের আওতায় আনতে সরকারি সংস্থাগুলোর কার্যক্রম আরও জোরদার করা প্রয়োজন।

বিএসটিআইয়ের পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যে ফরমালিন, ডিটারজেন্ট ও হাইড্রোজেন পারক্সাইড মেশানো হচ্ছে। এছাড়া, মিষ্টি, কেক, বিস্কুট এবং অন্যান্য খাদ্যপণ্যে কাপড়ের রং এবং অতিরিক্ত সোডিয়াম বেনজয়েট ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে মানুষের শরীরে নানা ধরণের স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

এদিকে, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জাকারিয়া জানিয়েছেন, এ বছর বাজার মনিটরিংয়ের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে এবং প্রতিদিন অভিযান চালানো হচ্ছে। তবে, তিনি বলেন, ভোক্তাদেরও সচেতন হতে হবে এবং পণ্য কেনার আগে সবকিছু যাচাই-বাছাই করে কিনতে হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, ভেজাল ও দূষিত খাদ্য গ্রহণের কারণে প্রতি বছর প্রায় ৬০ কোটি মানুষ অসুস্থ হয় এবং ৪ লাখ ৪২ হাজার মানুষ মারা যায়। বাংলাদেশের পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক, যেখানে প্রতি বছর ৩ লাখ মানুষ ক্যান্সারে, ২ লাখ কিডনি রোগে এবং দেড় লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া, প্রতি বছর ১৫ লাখ বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হচ্ছে, যা একটি চরম সংকটের ইঙ্গিত দেয়।

যত দ্রুত সম্ভব, সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ এবং জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা না হলে, পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।