মেধা নয়, অগ্রাধিকার সিন্ডিকেটে—অভিযোগ তরুণ অভিনেত্রীর
অনলাইন ডেস্ক:
বাংলাদেশের শোবিজ অঙ্গনের উদীয়মান মুখ নিদ্রা দে নেহা হঠাৎ করেই অভিনয় ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তরুণ এই প্রতিশ্রুতিশীল অভিনেত্রীর এই সিদ্ধান্তে শোবিজে শুরু হয়েছে আলোচনা ও আত্মসমালোচনার ঢেউ। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, ইন্ডাস্ট্রিতে মেধা ও পরিশ্রম নয়, অগ্রাধিকার পায় জনপ্রিয়তা, ফলোয়ার সংখ্যা এবং বিশেষ কিছু সিন্ডিকেটের অন্তর্ভুক্তি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক খোলা চিঠির মতো দীর্ঘ পোস্টে নেহা লিখেছেন, “আমি সবসময় শিল্প, সংস্কৃতি আর অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা থেকে কাজ করতে চেয়েছি। কিন্তু প্রতিনিয়ত অন্যায় আর অবমূল্যায়নের শিকার হয়ে সেই ভালোবাসা এখন ভেঙে পড়ছে।”
তিনি জানান, গত পাঁচ বছরে নিজেকে গড়ে তুলেছেন একজন দায়বদ্ধ ও পরিশ্রমী অভিনেত্রী হিসেবে। অভিনয়ে তাঁর যাত্রা শুরু হয় গৌতম কৌরীর পরিচালনায় ওয়েব ফিল্ম ‘আন্তঃনগর’ দিয়ে। এরপর নাটক, ওয়েব সিরিজ ও সিনেমায় ধারাবাহিকভাবে কাজ করছিলেন তিনি। কিন্তু প্রতিটি পদক্ষেপে কোনো না কোনো অদৃশ্য দেয়াল তার অগ্রযাত্রাকে রুখে দিয়েছে।
সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ঘটে সম্প্রতি, যখন শাকিব খান অভিনীত ‘তাণ্ডব’ সিনেমায় তাঁকে যুক্ত করার ঘোষণা আসে। নেহার দাবি, একদিন শুটিং করেই তাঁকে ‘অনৈতিকভাবে’ বাদ দেওয়া হয়, যার পেছনে কোনো যৌক্তিক কারণ ছিল না।
নেহা আরও বলেন, “প্রযোজকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক না থাকলে, জনপ্রিয়তা কম হলে কিংবা কোনো সিন্ডিকেটের সদস্য না হলে এখানে কাজ পাওয়া কিংবা টিকে থাকা কঠিন হয়ে যায়।” তিনি জানান, এই পরিস্থিতিতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন এবং হাতে থাকা প্রকল্পগুলোর প্রতিও আগ্রহ ধরে রাখা কঠিন হয়ে উঠেছে।
নেহার এই অভিজ্ঞতা অনন্য নয়। ইন্ডাস্ট্রির ভেতরে থাকা অনেক নবীন ও প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পীই একই ধরনের বঞ্চনা ও অবমূল্যায়নের শিকার হচ্ছেন—যা একটি বৃহৎ সমস্যার প্রতিচ্ছবি।
তার এই সিদ্ধান্ত একটি মৌলিক প্রশ্ন উত্থাপন করছে—শিল্প কি কেবলই বিনোদন? নাকি এটি এমন এক মূল্যবোধের ক্ষেত্র, যেখানে মেধা, সততা ও নিষ্ঠা সিন্ডিকেট ও জনপ্রিয়তার চেয়ে অগ্রাধিকার পায়?
নিদ্রা দে নেহার অভিনয় ছাড়ার ঘোষণা নিঃসন্দেহে একটি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, কিন্তু তার এই সাহসী অবস্থান শোবিজ অঙ্গনের অন্তরালের অসংগতিগুলো প্রকাশ্যে এনেছে। তরুণ প্রজন্মের শিল্পীরা যদি পেশাগত অনিশ্চয়তা ও অবমূল্যায়নের ভয়ে হারিয়ে যেতে থাকে, তবে ভবিষ্যতের সংস্কৃতি জগতের চালিকাশক্তি কোথা থেকে আসবে—এই প্রশ্ন এখন শোবিজ সমাজের সামনে স্পষ্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে।