নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশের বহু নদ-নদী ভয়াবহ পরিবেশগত সংকটের মুখোমুখি। সম্প্রতি রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার (আরডিআরসি) পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের ৮১টি নদী শুষ্ক মৌসুমে প্রায় পুরোপুরি শুকিয়ে যায়। এ তথ্য উঠে এসেছে ‘বাংলাদেশের শুকিয়ে যাওয়া নদী’ শিরোনামের গবেষণাপত্রে।
গবেষণায় জানানো হয়, এক সময় যেসব নদী কৃষি, জীববৈচিত্র্য ও স্থানীয় অর্থনীতির প্রাণ ছিল, বর্তমানে সেগুলোর অনেকটাই শুকিয়ে গেছে কিংবা পলিতে ভরাট হয়ে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছে খুলনা, সাতক্ষীরা, রাজশাহী ও কুষ্টিয়া অঞ্চল। এসব এলাকায় দূষণ, পলি জমা এবং নগরায়নের চাপে নদীগুলোর স্বাভাবিক জলপ্রবাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
আরডিআরসি’র তথ্যমতে, খুলনা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ২৫টি নদী শুকিয়ে গেছে। এরপর রাজশাহীতে ২০টি, রংপুরে ১৫টি, চট্টগ্রামে ৬টি, ময়মনসিংহে ৫টি, ঢাকায় ৪টি এবং বরিশাল ও সিলেটে ৩টি করে নদী এই সংকটে পড়েছে।
শুকিয়ে যাওয়া নদীগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য: আত্রাই, বেতনা, ভৈরব, গড়াই, কপোতাক্ষ, কুশিয়ারা, মাথাভাঙ্গা, মুহুরী, সুরমা, তিস্তা, তিতাস, পুনর্ভবা ও আরও অনেক। নদীগুলোর নামের পূর্ণ তালিকা গবেষণা প্রতিবেদনে সংযুক্ত রয়েছে।
গবেষণায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা-মেঘনা (বিজিএম) অববাহিকা নিয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, উজানে বাঁধ নির্মাণ ও পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণের ফলে এসব নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে, যা কোটি মানুষের জীবনধারাকে প্রভাবিত করছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, “জলস্তরের অস্বাভাবিক ওঠানামা ও নদীর মৃত্যু মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে। শুধু মানুষ নয়—প্রভাব পড়ছে বন্যপ্রাণী, জলজ বাসস্থান এবং সামগ্রিক প্রাকৃতিক ভারসাম্যের ওপর।”
এ অবস্থায় নদী দূষণ রোধ, ভাঙন প্রতিরোধ ও নদীর প্রাকৃতিক পরিবেশ পুনরুদ্ধারে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে আরডিআরসি। তবে সংস্থাটি মনে করে, জাতীয় উদ্যোগের পাশাপাশি আঞ্চলিক সহযোগিতাও গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, “অনেক নদী আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করে প্রবাহিত হয়। তাই বাংলাদেশের উচিত উজানের দেশগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে নদী রক্ষায় কাজ করা। একমাত্র সম্মিলিত প্রচেষ্টায়ই নদীগুলোকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করা সম্ভব।”
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ২৪,০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ নদী ও খাল রয়েছে। বর্ষাকালে এর মধ্যে ৬,০০০ কিলোমিটার নৌযান চলাচলের উপযোগী হলেও শুষ্ক মৌসুমে তা কমে দাঁড়ায় মাত্র ৩,৮০০ কিলোমিটারে।