নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশে সরকারি ও বেসরকারি অফিস, ব্যাংক এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকলেও হাসপাতালগুলোতে সেবা প্রদান বন্ধ থাকে না। যদিও ঈদের সময়ে হাসপাতালগুলোতে রোগীদের জন্য সেবার ব্যবস্থা কম থাকে, তবুও চিকিৎসা সেবা প্রদান অব্যাহত থাকে। ঈদের সময়ে কীভাবে হাসপাতালগুলোতে সেবা দেওয়া হয় এবং রোগীরা সেই সেবা পান কিনা, তা নিয়ে কৌতূহল দেখা দিয়েছে।
রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল পরিদর্শন করে দেখা গেছে, ঈদের দিনেও হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত রোগী উপস্থিত ছিলেন। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ঈদের দিন প্রায় ৫০০ রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। যদিও সিনিয়র চিকিৎসকরা কম আসেন, তবুও মেডিকেল অফিসার এবং জুনিয়র ডাক্তাররা রোগীদের সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন।
হবিগঞ্জ জেলার আহাদ মিয়া (৬০) এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে কিডনিতে পাথর নিয়ে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তিনি জানান, “ডাক্তার কিডনি ওয়াশ করছেন এবং চিকিৎসা এখনও চলছে। ঈদের দিনেও নিয়মিত চিকিৎসা পাচ্ছি।”
বরগুনা থেকে আসা সফেদ হাওলাদার (৭২) বলেন, “ঈদের ছুটিতেও আমার চিকিৎসা চলছে, তবে বড় ডাক্তার না থাকায় অপারেশন ঈদের পর করা হবে।” হাসপাতালের সিনিয়র নার্স সাধনা হালদার জানান, ঈদের ছুটিতে ডাক্তার ও নার্সের সংখ্যা কিছুটা কম থাকে, তবে জরুরি সেবার জন্য সবসময় একজন ডাক্তার এবং নার্স উপস্থিত থাকেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালেও একই চিত্র দেখা যায়। জরুরি বিভাগে চিকিৎসা সেবা চালু থাকলেও ওয়ার্ডে সিনিয়র ডাক্তারদের আনাগোনা কম থাকে। এক রোগীর স্বজন বলেন, “ঈদে বড় ডাক্তারদের না দেখে একটু ভয় লাগে, তবে চিকিৎসার সেবা ঠিকঠাক পাচ্ছি।”
এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঈদের ছুটির মধ্যে হাসপাতালগুলোতে জরুরি সেবা অব্যাহত রাখতে ১৬ দফা নির্দেশনা জারি করেছে। এর মধ্যে জরুরি বিভাগের সেবা এবং লেবার রুম, ইমার্জেন্সি অপারেশন থিয়েটার এবং ল্যাব কার্যক্রম চালু রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।
প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে রোগীদের জন্য সেবার মান প্রশ্নবিদ্ধ হলেও, ঈদের দিন বেশিরভাগ প্রাইভেট হাসপাতালে ল্যাব কার্যক্রম বন্ধ থাকে, এমন অভিযোগ এসেছে রোগীদের কাছ থেকে। তবে বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, ঈদের আগে অনেক রোগী নিজে থেকেই রিলিজ চান এবং তাদের পরিবারের সঙ্গে ঈদ কাটাতে চান।
সবশেষে, ঈদের দিন হাসপাতালগুলোতে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। সকালে রোগীদের সেমাই, পাউরুটি, কলা, দুধ, ডিম ও বিস্কুট দেওয়া হয়। দুপুরে পোলাও, মুরগির রোস্ট, রেজালা, ডিম কোরমা, কোক ও পরে ফল দেওয়া হয়।
তবে, হাসপাতালগুলোতে ঈদ কাটানো একেবারেই কাম্য নয় রোগীদের। তারা চাইছেন, যদি হাসপাতালেই থাকতে হয়, তবে তাদের চিকিৎসাসেবা যেন পূর্ণাঙ্গ এবং যথাযথভাবে প্রদান করা হয়।