কাশ্মীর সংকটে সীমান্ত উত্তেজনা চরমে, ভারতীয় কোয়াডকপ্টার গুলি করে ভূপাতিত করল পাকিস্তান

অনলাইন ডেস্ক:

কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে সীমান্তে নতুন করে চরম উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার পাকিস্তান সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা একটি ভারতীয় কোয়াডকপ্টার ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে, যা তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে নজরদারি চালানোর চেষ্টা করছিল।

ঘটনাটি ঘটেছে পাকিস্তানের ভিম্বার জেলার মানাওয়ার সেক্টরে, লাইন অব কন্ট্রোল (এলওসি) বরাবর। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ভারতীয় ড্রোনটি সীমান্ত অতিক্রম করে পাকিস্তানের আকাশে প্রবেশ করায় সেনারা সঙ্গে সঙ্গে গুলি চালিয়ে সেটিকে ভূপাতিত করেন। তারা এটিকে একটি “গুপ্তচরচেষ্টা” হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেছে, সময়মতো প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে নিরাপত্তা হুমকি মোকাবিলা করা সম্ভব হয়েছে।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, এই ড্রোনটি ছিল একটি কোয়াডকপ্টার, যা সাধারণত চার প্রপেলারের মাধ্যমে পরিচালিত হয় এবং গোয়েন্দা নজরদারি, তথ্য সংগ্রহ ও সীমান্ত পর্যবেক্ষণে ব্যবহৃত হয়।

ড্রোন ভূপাতিত হওয়ার ঘটনাটি এমন এক সময়ে ঘটলো যখন কাশ্মীর ইস্যুতে দুই দেশের সম্পর্ক চূড়ান্তভাবে অবনতি হয়েছে। ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগাঁও এলাকায় পর্যটকদের ওপর প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন বেসামরিক পর্যটক। এটিকে ২০০০ সালের পর কাশ্মীরে অন্যতম ভয়াবহ হামলা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

এই হামলার পর ভারত হামলার জন্য সীমান্তপারের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিত দেয়, যদিও কোনো সরাসরি প্রমাণ উপস্থাপন করেনি। পাকিস্তান ভারতের এসব অভিযোগকে “ভিত্তিহীন” বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ হামলার তদন্তে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নিরপেক্ষ কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন।

এ ঘটনায় পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ হিসেবে ২৩ এপ্রিল ভারত একতরফাভাবে ১৯৬০ সালের ঐতিহাসিক সিন্ধু পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিত ঘোষণা করে, যা বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় সম্পাদিত হয়েছিল। জবাবে পাকিস্তান হুঁশিয়ারি দিয়েছে, তারা ১৯৭২ সালের শিমলা চুক্তি স্থগিত করতে পারে এবং ভারতের আকাশসীমা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞাও দিতে পারে।

ড্রোন ভূপাতিত হওয়ার ঘটনাটিকে বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছেন বিশ্লেষকরা, কারণ এটি শুধু আকাশসীমা লঙ্ঘন নয়, দুই দেশের সামরিক উত্তেজনাকে আরও তীব্রতর করার কারণ হতে পারে।

এদিকে ডয়চে ভেলে-র তথ্য অনুসারে, ২৫ এপ্রিল থেকে প্রতিরাতেই সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটছে। এখনো পর্যন্ত বড় ধরনের হতাহতের খবর পাওয়া না গেলেও দুই দেশই ব্যাপক সামরিক প্রস্তুতি নিচ্ছে। কাশ্মীর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে এবং চলছে টানা নজরদারি ও টহল কার্যক্রম। এসব ঘটনায় সীমান্তবর্তী এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।