নিজস্ব প্রতিবেদক:
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থানায় মামলা দায়ের করেছে। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে কুয়েটের নিরাপত্তা পরিদর্শক মনিরুজ্জামান লিটন বাদী হয়ে খানজাহান আলী থানায় অজ্ঞাতনামা ৪০০ জনকে আসামি করে মামলা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তরের জনসংযোগ (অতিরিক্ত দায়িত্ব) কর্মকর্তা শাহেদুজ্জামান শেখ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই মামলা করা হয়েছে বলে জানানো হয়।
ঘটনার পরদিন বুধবার কুয়েটের ৯৩তম সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে একাডেমিক কার্যক্রম ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করা হয়। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও ছাত্র বিষয়ক পরিচালকের পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা আল্টিমেটাম দেন। পরবর্তীতে উপাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ৯৮তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে আশ্বাস দেওয়া হয়।
সংঘর্ষের ঘটনাটি তদন্তের জন্য চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, যাকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সভা শেষে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ছাত্রদের দুটি পক্ষের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার ফলে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে।
ঘটনার পর সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঘটনার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে চারটি দাবি উপস্থাপন করেন। এ সময় উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাছুদ শিক্ষার্থীদের যেকোনো অন্যায়ের বিচার ও তাদের সার্বিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন। দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তিনি স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান। এছাড়া, শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়নের জন্য ডিন, ইনস্টিটিউট পরিচালক, রেজিস্ট্রার, বিভাগীয় প্রধান ও প্রভোস্টদের নিয়ে একটি বিশেষ সভার আয়োজন করেন।
কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পৌঁছানোর আগেই বহিরাগত কিছু সন্ত্রাসী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে উপাচার্য, সহ-উপাচার্যসহ কয়েকজন শিক্ষক ঘটনাস্থলে যান এবং শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়ে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের আটকে রাখার চেষ্টা করেন। সংঘর্ষ চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক, কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী ও কর্মচারী আহত হন এবং কুয়েট মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা নেন। এমনকি উপাচার্য শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লেও শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।