অনলাইন ডেস্ক:
১৫ মাসের সংঘাতের পর গাজার মানবিক পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। বর্তমানে গাজার ৯০ শতাংশ মানুষ বাস্তুহারা হয়ে গেছে এবং ৯১ শতাংশ মানুষ তীব্র খাদ্য সংকটে ভুগছে। গত বছরের অক্টোবর থেকে চলমান এই সংঘাতের ফলে গাজায় ব্যাপক মানবিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। গাজার অধিকাংশ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে এবং হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। যদিও ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছে, কিন্তু গাজার ক্ষয়ক্ষতি এবং সংকটের অবসান এখনও হয়নি।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, সংঘাতে গাজার ৪৬ হাজার ৯১৩ জন মানুষ নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৫৯ শতাংশ নারী, শিশু এবং বৃদ্ধ। এছাড়া, ১ লাখ ১০ হাজার ৭৫০ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ২৫ শতাংশের আঘাত এতটাই গুরুতর যে তারা আর আগের অবস্থায় ফিরতে পারবেন না। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা ৭০ শতাংশের কাছাকাছি হতে পারে।
গাজার অবকাঠামো ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয়েছে। স্যাটেলাইট চিত্রের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞরা জানান, গাজার ৬৯ শতাংশ ভবন সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্যমতে, গাজার রাস্তাঘাটের ৬৮ শতাংশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাসপাতালগুলো প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলে চিকিৎসা সেবা অত্যন্ত সীমিত হয়ে পড়েছে। ৫০ শতাংশ হাসপাতাল এখন কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে, আর বাকি হাসপাতালগুলো শুধু জরুরি সেবা প্রদান করছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজার মোট ২৩ লাখ মানুষের মধ্যে ১৯ লাখ মানুষ বাস্তুহারা হয়ে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। গাজার উত্তরের বেশিরভাগ অঞ্চলে মানুষকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, যার ফলে আশ্রয়হীন মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেসব জায়গায় এখন অস্থায়ী তাঁবু এবং কাঠামো তৈরি করে আশ্রয় নেয়া হচ্ছে।
গাজার ৯১ শতাংশ মানুষ তীব্র খাদ্য সংকটে ভুগছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি জানাচ্ছে, খাদ্য সরবরাহ অত্যন্ত সীমিত হয়ে পড়েছে এবং উত্তর গাজার কৃষিজমি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৬৭ শতাংশ কৃষিজমি গোলাবর্ষণ এবং সংঘাতের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় খাদ্য উৎপাদন কমে গেছে। ত্রাণ সরবরাহের পরিমাণও উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে এবং অনেক সময় ত্রাণ পৌঁছাতে বাধা সৃষ্টি হয়। অপরাধী চক্র ত্রাণ লুটের মাধ্যমে সমস্যাটি আরও জটিল করেছে।
গাজার পুনর্গঠন এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতিসংঘের অনুমান অনুযায়ী, গাজা পুনর্গঠনে ৪০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হতে পারে। তবে, চলমান সংঘাত এবং মানবিক সহায়তার সীমাবদ্ধতা পুনর্গঠন প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, গাজার পূর্ণ পুনর্গঠন এবং অবকাঠামো নির্মাণে ১০ বছরেরও বেশি সময় লাগতে পারে।
গাজায় স্বাস্থ্য সেবার সংকট গভীর হয়েছে। অনেক হাসপাতাল বন্ধ হয়ে গেছে এবং চিকিৎসা সেবা কঠিন হয়ে পড়েছে। এছাড়া, গাজার শিক্ষা ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৪৯টি স্কুল ভবনে হামলা চালানো হয়েছে এবং অনেক স্কুল এখন আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ভবিষ্যতে গাজার শিক্ষা ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করাও বড় চ্যালেঞ্জ হবে।
এ অবস্থায়, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও গাজার পুনর্গঠন এবং মানুষের জীবনযাত্রা পুনরুদ্ধার করা বড় এক প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।