গাজায় মানবিক সহায়তা বন্ধ, নিন্দা জানাল জাতিসংঘ ও আরব দেশ

অনলাইন ডেস্ক:

গাজা উপত্যকায় সব ধরনের মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়ার কারণে ইসরায়েলকে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ এবং কয়েকটি আরব দেশ। গত রোববার ইসরায়েল এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা অস্ত্রবিরতি চুক্তির লঙ্ঘন হিসেবে দেখা হয়েছে। মিশর ও কাতার এই পদক্ষেপকে তীব্রভাবে নিন্দা জানিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন ভঙ্গের অভিযোগ করেছে।

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (পূর্বে টুইটার) এ লিখেছেন, “আন্তর্জাতিক মানবিক আইন স্পষ্ট: আমাদের প্রাণরক্ষাকারী সহায়তা পৌঁছানোর সুযোগ দিতে হবে।” তিনি উল্লেখ করেন যে, এই পদক্ষেপ মানবিক সংকট আরও বাড়িয়ে দিতে পারে এবং তা এক অত্যন্ত উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরায়েলের সিদ্ধান্তকে ‘অস্ত্রবিরতি চুক্তি এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’ হিসেবে অভিহিত করেছে। একইভাবে, মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও ইসরায়েলকে ‘ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার’ করার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে। সৌদি আরবও এই মানবিক সহায়তা অবরোধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং এটি আন্তর্জাতিক চুক্তির লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন যে হামাস মানবিক সহায়তা লুট করছে এবং সেগুলো ‘সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য ব্যবহার করছে’। তিনি আরও অভিযোগ করেছেন যে হামাস মার্কিন প্রস্তাবিত অস্ত্রবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে, ফলে ইসরায়েলকে মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে।

হামাস এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে এবং এক মুখপাত্র দাবি করেছেন যে তারা মানবিক সহায়তা লুট করেনি। হামাস তাদের পক্ষ থেকে এই অবরোধকে ‘সস্তা ব্ল্যাকমেইল’ এবং অস্ত্রবিরতি চুক্তির বিরুদ্ধে ‘অভ্যুত্থান’ বলে অভিহিত করেছে। হামাস জানায়, তারা অস্ত্রবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে ছিল না, কারণ মধ্যস্থতাকারীরা দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরু করার নিশ্চয়তা দিতে পারেনি।

হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে গত জানুয়ারিতে একটি অস্ত্রবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যা ১৫ মাস ধরে চলা সংঘর্ষ বন্ধ করে। এই চুক্তির অধীনে ৩৩ জন ইসরায়েলি বন্দির বিনিময়ে প্রায় ১,৯০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়। অস্ত্রবিরতির প্রথম ধাপ ১৯ জানুয়ারি কার্যকর হয়েছিল, কিন্তু দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা এখনও শুরু হয়নি। এর মধ্যে গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহার এবং স্থায়ী অস্ত্রবিরতি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল, যা এখনও হয়নি।

বিশ্বখাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) কর্মকর্তা আন্তোইন রেনার্ড বিবিসিকে বলেন, “গাজায় মানবিক সহায়তার প্রবাহ চালিয়ে যাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।” তিনি সব পক্ষকে একটি সমাধানে পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়েছেন। অস্ত্রবিরতির পর থেকে প্রতিরাতে হাজার হাজার ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে, যা বেসামরিক জনগণের জন্য জরুরি সহায়তা সরবরাহ করছে। তবে ইসরায়েলের এই সিদ্ধান্তের ফলে গাজায় মানবিক সংকট আরও তীব্র হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।