অনলাইন ডেস্ক:
‘আমার নিজের সামান্য খাবার থেকে প্রায়ই আমার ছেলেকে ভাগ দিতে হয়। এই ক্ষুধাতেই আমি মারা যাবো—ধীরে ধীরে আমাকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাচ্ছে।’—বেদনাদায়ক এই কথাগুলো বলেন ৪৪ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হিকমাত আল মাসরি।
গাজার পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। শিশুরা গড়ে দিনে একবারেরও কম খাবার পাচ্ছে। অনেক পরিবারে বাবা-মা নিজেরা না খেয়ে সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন। আবার অনেকেই নিজেরা যেমন অভুক্ত, তেমনি সন্তানের মুখেও দিতে পারছেন না কিছুই।
গত ২ মার্চ থেকে গাজা উপত্যকায় সব ধরনের মানবিক সহায়তা প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রশাসন। ফলে গাজাবাসীর জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। খাদ্য, জ্বালানি, বিদ্যুৎ, চিকিৎসা সামগ্রী সবই শেষপ্রায়।
ইসরায়েলের অবরোধ ও অবিরাম বোমাবর্ষণে গাজাবাসীর মাথার ওপর এখন শুধুই মৃত্যু আর অনাহারের ছায়া। একদিকে জেনারেটরের শেষভাগের বিদ্যুৎ, অন্যদিকে পানি ও খাদ্যের চরম সংকট—অন্ধকারের অতলে নিমজ্জিত হচ্ছে লক্ষ লক্ষ মানুষ।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, গাজার প্রায় ৭০ শতাংশ ভূমি এখন ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে। সেনারা গাজাকে মিসর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এই অবরোধ আর সামরিক আগ্রাসন একটি সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা, যেখানে ক্ষুধাকেও অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ও অক্সফামের তথ্য বলছে, গাজায় বাজারে মূল্যস্ফীতি ১,৪০০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। গড়ে শিশুদের একবেলার কম খাবার জোটে। ত্রাণের জন্য মানুষ দিশেহারা হয়ে খালি হাঁড়ি নিয়ে ঘুরছে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে।
চিকিৎসা ব্যবস্থাও ধসে পড়ছে। গাজায় বার্ন ক্লিনিকে ১০টার মধ্যেই ভর্তি বন্ধ করতে হয়, কারণ ওষুধের মজুত তলানিতে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ইসরায়েলের বিমান হামলা হাসপাতাল, স্কুলসহ বেসামরিক স্থাপনাগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু করছে। আইডিএফ অবশ্য দাবি করেছে, তারা হামাস যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে হামলা চালায়।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের আগ্রাসনের চেয়েও এখন গাজাবাসী বেশি ভয় পাচ্ছে অনাহারকে।
এই মানবিক বিপর্যয় রুখতে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সহায়তার আহ্বান জানালেও ইসরায়েল তেমন কোনো চাপ অনুভব করছে না। ফলে মানবিক সহায়তা পাঠানো কিংবা যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনাও দিন দিন ক্ষীণ হয়ে আসছে।