চীন-যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক ইস্যুতে আলোচনার ইঙ্গিত

অনলাইন ডেস্ক:

চীনের সঙ্গে শুল্ক সংক্রান্ত ইস্যুতে সমঝোতার একটি পথ রয়েছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট। তবে দুই দেশের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যচুক্তি স্বাক্ষর হতে আরও সময় লাগবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। রোববার (২৭ এপ্রিল) মার্কিন টেলিভিশন নেটওয়ার্ক এবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন—এ খবর জানিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান।

বেসেন্ট জানান, গত সপ্তাহে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (IMF) বৈঠকের সময় চীনা প্রতিনিধিদের সঙ্গে তার অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে আলোচনা হয়। তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে সরাসরি কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে নিশ্চিত নন বলেও জানান তিনি।

চীন অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক সংক্রান্ত আলোচনার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র যেন কোনো ধরনের “ভুল ধারণা” সৃষ্টি না করে।

এ বিষয়ে মার্কিন অর্থমন্ত্রীর মন্তব্য, “চীনের জনগণকে খুশি করতেই দেশটি এ ধরনের বার্তা দিচ্ছে। তারা আসলে ভিন্ন শ্রোতাদের উদ্দেশে কথা বলছে।” তিনি আরও বলেন, “উচ্চ শুল্কহার চীনের ব্যবসার জন্য টেকসই নয়—তারা এটি শিগগিরই বুঝতে পারবে।”

বেসেন্ট জানান, শুল্ক নিয়ে প্রথম ধাপের আলোচনায় উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হতে পারে। পরে আরও ১৭-১৮টি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য ইস্যুতে নীতিগত সমঝোতায় পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে কাজাখস্তানে এক আঞ্চলিক সম্মেলনের ফাঁকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র অকারণে বাণিজ্যযুদ্ধ উসকে দিচ্ছে। কিছু দেশ নিজেদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে অন্যদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে—এতে চরম স্বার্থপরতা ফুটে উঠছে।”

মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট এ সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আলোচনাকৌশলের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “এই কৌশলকে গেম থিওরিতে কৌশলগত অনিশ্চয়তা (Strategic Ambiguity) বলা হয়। এতে প্রতিপক্ষকে আলোচনা চলাকালে চূড়ান্ত লক্ষ্য সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয় না।”

শুল্ক সংক্রান্ত এই অস্থিরতার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা বিক্রেতারা হোয়াইট হাউসকে সতর্ক করেছেন। তারা জানান, অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ফলে দ্রব্যের মজুত শেষ হয়ে আসছে, দাম বাড়ছে, এবং ভোক্তাদের ওপর চাপ বাড়ছে। ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌন্দর্যপণ্য, স্বাস্থ্যসেবা সামগ্রী, খেলনা এবং বাসাবাড়ির জিনিসপত্রের গড় মূল্য উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, শুল্কের ফলে দেশটির করদাতারা উপকৃত হবেন। তাদের আয়কর কমে যাবে এবং অনেক ক্ষেত্রেই তা বিলুপ্ত হবে। শুল্ককে তিনি “আমেরিকানদের জন্য একটি বিশাল সুযোগ (Bonanza)” বলে উল্লেখ করেন।

এদিকে, সিএনএনের এক অনুষ্ঠানে মার্কিন কৃষিমন্ত্রী ব্রুক রোলিন্স জানান, বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে কৃষিপণ্য রপ্তানিতে প্রভাব পড়লেও কৃষকদের সহায়তার জন্য সরকার প্রস্তুত রয়েছে। তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন, এমন পরিস্থিতির প্রয়োজন পড়বে না।