নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশের বিচার বিভাগের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা ও প্রশাসনিক কাঠামো প্রতিষ্ঠার পথে এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতির কথা জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তিনি জানিয়েছেন, বিচার বিভাগে পৃথক সচিবালয় গঠনের লক্ষ্যে অধ্যাদেশ প্রণয়নের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে এবং এই উদ্যোগ বিচার বিভাগের সক্ষমতা ও স্বাধীনতাকে দৃঢ় করবে।
শনিবার খুলনার হোটেল সিটি ইন-এর কনফারেন্স রুমে সুপ্রিম কোর্ট ও ইউএনডিপি বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘Judicial Independence and Efficiency in Bangladesh’ শীর্ষক আঞ্চলিক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, “জুলাই বিপ্লবের পর দেশের বিচার ব্যবস্থা একটি নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে। জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারে সরকার ও সুপ্রিম কোর্ট একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।” তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করে জানান, বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ বাস্তবায়নে সরকারের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগ ও বিচারকের পদসংখ্যা বৃদ্ধিতে দ্রুত অধ্যাদেশ প্রণয়ন করা হচ্ছে, যা বিচার প্রক্রিয়ার গতি বাড়াবে এবং মামলাজট নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠার কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি, কক্সবাজারে সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট চালু করার জন্য দুটি বিশেষ কমিটি গঠিত হয়েছে, যা দেশের বিচার গবেষণাকে আরও আধুনিক ও কার্যকর করে তুলবে।
সেমিনারে ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার বলেন, “প্রধান বিচারপতির ঘোষিত রোডম্যাপ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ কাঠামোগত স্বতন্ত্রতা অর্জনের পথে এক ঐতিহাসিক অগ্রগতি অর্জন করবে।”
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস।
সেমিনারে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার বিচার বিভাগের কর্মকর্তারা ছাড়াও খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, পাবলিক প্রসিকিউটরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের আমন্ত্রিত অতিথিরা অংশ নেন।
প্রধান বিচারপতি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “শিগগিরই একটি দীর্ঘমেয়াদি স্ট্রাটেজিক প্ল্যান প্রণয়ন করা হবে, যা দেশের বিচার ব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ, আধুনিক ও জনগণের কাছে সহজলভ্য করে তুলবে।”
সেমিনারটি ছিল বিচার বিভাগের কাঠামোগত স্বাধীনতার পথে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, যেখানে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ভিত্তি গড়ে তোলা হলো বিচারিক স্বচ্ছতা ও দক্ষতা অর্জনের লক্ষ্যে।