ট্রাকচালকের পায়ে গুলি,ওসিসহ পুলিশের ১৫ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা

অনলাইন ডেস্ক:

সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানা পুলিশ কর্তৃক এক ট্রাকচালকের পায়ে গুলি করে তাকে পঙ্গু করার অভিযোগে সাবেক দুই ওসিসহ ১৫ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মামলার বাদী পাবনার ফরিদপুর উপজেলার নেছড়াপাড়া গ্রামের মো. রহম মোল্লার ছেলে রোকন মোল্লা। গত মঙ্গলবার সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানা আমলী আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কে এম শাহরিয়ার শহীদ বাপ্পী এ আদেশ দেন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, গত বছরের ৩১ মে রোকন মোল্লা তার ট্রাকের মালামাল বগুড়া পৌছে বাড়ি ফিরছিলেন। উল্লাপাড়া পৌর এলাকার কাওয়াক মোড় এলাকায় বৃষ্টির কারণে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে যায় এবং থানার ওসির ব্যবহৃত পিকআপভ্যানে ধাক্কা লাগে। তখন ক্ষিপ্ত হয়ে ওসি রোকনের দিকে রিভলবার তাক করে তাকে ধাওয়া করেন। রোকন দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে সলঙ্গা থানার সীমানায় ঢুকে পড়েন। এরপর সেখানেও পুলিশ তার পিছু নেয়ে তাকে আটকে ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে ফেলে।

ওসি আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম এবং সলঙ্গা থানার ওসি মো. এনামুল হক রোকন মোল্লাকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে সলঙ্গা থানায় নিয়ে আসেন এবং সেখানে তাকে পুকুরে চুবিয়ে নির্যাতন করা হয়। এরপর রোকনের ডান পায়ে হাঁটুর নিচে রিভলবার দিয়ে গুলি করা হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে পিকআপে করে সলঙ্গা থানায় নিয়ে গিয়ে আরও নির্যাতন করা হয়।

রোকনের অবস্থার অবনতি হলে তাকে প্রথমে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়, যেখানে তার ডান পা কেটে ফেলা হয়।

এদিকে, মামলার আসামিরা হলেন, উল্লাপাড়া মডেল থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম, সলঙ্গা থানার সাবেক ওসি মো. এনামুল হক, সলঙ্গা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ তাজ উদ্দিন আহমেদ, উল্লাপাড়া থানার উপ-পরিদর্শক মো. আব্দুস সালাম, সলঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক মনছুর রহমান ও সলঙ্গা থানার এএসআই আব্দুল কুদ্দুস। অজ্ঞাতনামা ৯-১০ জন পুলিশ সদস্যকেও আসামি করা হয়েছে।

বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম হাফিজ কিরণ জানান, ২ জানুয়ারি রোকন মোল্লা আদালতে একটি পিটিশন দাখিল করেন এবং বিচারক রোকনের চিকিৎসা সংক্রান্ত মেডিকেল সার্টিফিকেট ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। ২৭ জানুয়ারি সার্টিফিকেট দাখিলের পর, ৩০ জানুয়ারি আদালত এফআইআর হিসেবে মামলাটি রুজু করার নির্দেশ দেন।

এ বিষয়ে সলঙ্গা থানার সাবেক ওসি এনামুল হক অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রোকন মোল্লা একটি আন্তঃজেলা ডাকাত, এবং পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে পাল্টা গুলি চালিয়েছিল। তিনি আরও দাবি করেন, রোকন মোল্লা গুলি ছুঁড়েছিল এবং পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে তিনি আহত হন।

সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. ফারুক হোসেন বলেছেন, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী পিটিশনটি মামলাতে রুজু করে তদন্ত চালানো হবে এবং প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।