জেলা প্রতিনিধি :
ফেনী জেলার খালগুলো এখন আর শুধু পানি প্রবাহের স্থান নয়, ময়লা-আবর্জনায় ভর্তি হয়ে রূপ নিয়েছে একেকটি ময়লার ভাগাড়ে। প্লাস্টিক, পলিথিন, খাবারের প্যাকেটসহ নানান বর্জ্যে ঢেকে গেছে খালের জলপথ। এর ফলে বর্ষা মৌসুমে সৃষ্টি হচ্ছে চরম জলাবদ্ধতা, বাড়ছে মশার উৎপাত ও দুর্গন্ধ—যা শহরবাসীর নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে।
জেলার ছয়টি উপজেলার অন্তত ২৪৪টি খাল ও শাখা নদী দখল ও দূষণের কবলে পড়েছে। ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, শুধুমাত্র সোনাগাজীতে ৫৬টি, দাগনভূঞায় ৫২টি, সদর উপজেলায় ৩৯টি, পরশুরামে ৪টি, ছাগলনাইয়ায় ৩টি এবং ফুলগাজীতে ৯০টি খাল অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।
শহরের খালগুলোর মধ্যে পাগলিছড়া, পিটিআই সংলগ্ন খাল এবং খাজা আহম্মদ লেকের অবস্থা সবচেয়ে করুণ। এইসব খাল দিয়ে এক সময় চলত ব্যবসায়িক নৌকা, বসত রাসমেলা। কিন্তু এখন এসব জলপথ দখল ও পলি জমে সংকুচিত হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও খালের অস্তিত্বই আর নেই।
২০১১ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খালের উপর নির্মিত হয়েছে মার্কেট ও স্থাপনা। শহরের দাউদপুর, দাগনভূঞার দত্তের খাল এবং সোনাগাজীর ডাঙ্গি খাল এখন কার্যত নর্দমায় পরিণত হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের অভাবে একাডেমি এলাকা ও নিম্নাঞ্চলে সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটুপানি জমে যায়।
এ বিষয়ে ফেনীর পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আক্তার হোসেন মজুমদার জানান, গত পাঁচ বছরে ৪০০ কিলোমিটার খাল পুনর্র্নিমাণ করা হয়েছে। তবে দখল ও জটিলতা থাকায় শহরের খালগুলোর উন্নয়ন থমকে আছে। পৌর প্রশাসক গোলাম মো. বাতেন জানান, ময়লা পরিষ্কারের কার্যক্রম চলমান থাকলেও পুনরুদ্ধারে নানা প্রশাসনিক জটিলতা রয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোসাম্মৎ শওকত আরা কলি বলেন, “মানুষের সচেতনতার অভাবে খালে ফেলা হচ্ছে প্লাস্টিক ও পলিথিন। যা খালের পরিবেশকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।”
প্রবীণ সাংবাদিক আবু তাহের বলেন, “গত ৩০-৪০ বছর ধরেই চলেছে খাল দখলের প্রক্রিয়া। কাগজে খাল থাকলেও বাস্তবে তার কোনো চিহ্ন নেই। এই দখল ও দূষণের ফল মানুষ ভয়াবহ বন্যায় টের পেয়েছে।”
জনসচেতনতা, সঠিক পরিকল্পনা ও প্রশাসনিক সদিচ্ছা ছাড়া ফেনীর মৃতপ্রায় খালগুলো পুনরুদ্ধার সম্ভব নয় বলে মত দিচ্ছেন স্থানীয়রা।