অনলাইন ডেস্ক:
ভারতের ওয়াকফ আইন নিয়ে যখন দেশজুড়ে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ তীব্র হয়ে উঠেছে, ঠিক সেই সময় এক সুস্পষ্ট অবস্থান জানালেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তিনি জানিয়েছেন, এই আইন পশ্চিমবঙ্গে কার্যকর করা হবে না, এবং রাজ্য সরকার এর কোনো অংশেই সমর্থন করে না।
শনিবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে সামাজিকমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে মমতা বলেন, “বাংলায় তা বলবৎও হবে না। তা হলে হিংসা কেন? যারা এই হিংসায় উসকানি দিচ্ছেন, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।” তাঁর এই বক্তব্য ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে যেমন সাড়া পড়েছে, তেমনি রাজ্যের মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, “সেই আইনটি কিন্তু আমরা করিনি। আইনটি কেন্দ্রীয় সরকার করেছে। তাই উত্তর যা চাওয়ার, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছেই চাইতে হবে।” তিনি অভিযোগ করেন, কিছু রাজনৈতিক দল ধর্মকে অপব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে। “তাদের প্ররোচনায় পা দেবেন না। আমি মনে করি, ধর্ম মানে মানবিকতা, সহৃদয়তা, সভ্যতা ও সম্প্রীতি,”—এভাবেই শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে, আনন্দবাজার পত্রিকা ও বিবিসি’র খবরে জানা গেছে, ওয়াকফ আইন বাতিলের দাবিতে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এখন বিক্ষোভ চলছে। সুপ্রিম কোর্টেও জমা পড়েছে একাধিক পিটিশন, যার শুনানি হবে আগামী সপ্তাহে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সাংবিধানিক বেঞ্চে।
উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার ইতিমধ্যে হাজার হাজার ওয়াকফ সম্পত্তি চিহ্নিত করে বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। রাজ্যটির মুজফফরনগরে গত শুক্রবার জুমার নামাজের সময় আইনটির প্রতিবাদে কালো ব্যান্ড পরে নামাজ আদায় করায় শত শত মানুষকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তাদের মাথাপিছু ২ লাখ রুপি জরিমানার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গেও এই আইন নিয়ে প্রতিবাদ থেমে নেই। গেল বৃহস্পতিবার কলকাতায় জমিয়ত-ই-উলেমা হিন্দের বিশাল সমাবেশ থেকে ওয়াকফ আইন বাতিলের দাবিতে এক কোটি স্বাক্ষর সংগ্রহ করে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে যখন আইনটি ঘিরে উত্তেজনা ও বিভ্রান্তি চলছে, তখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির এই ঘোষণা রাজ্যে শান্তি বজায় রাখতে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে কেন্দ্র-রাজ্যের এই দ্বন্দ্বের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা সময়ই বলে দেবে।