অনলাইন ডেস্ক:
বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে জলবায়ুজনিত দুর্যোগের ঝুঁকি বাড়ছে, যা আরও সুরক্ষিত ব্যবস্থা এবং অর্থায়নের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্প্রতি তাদের ‘অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশন-২০২৪’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে বাংলাদেশের দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশনের গুরুত্ব এবং তার প্রভাবের ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে ২০২৪ সালে অর্জিত অগ্রগতির পাশাপাশি অর্থায়ন এবং কভারেজের ঘাটতির বিষয়েও আলোকপাত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হলো:
১. অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশন একীভূত করা হয়েছে: বাংলাদেশ সরকার ২০১৯ সালে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাঠামোর সঙ্গে অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশন একীভূত করেছে, যা পরবর্তীতে স্থায়ী দুর্যোগ বিষয়ক আদেশে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
২. অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশন কার্যক্রম: ২০২৪ সালে ১৫টি অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশন কার্যকর করা হয়েছে, যা ২০টি জেলাকে অন্তর্ভুক্ত করে এবং চারটি প্রধান বিপর্যয়ের (বর্ষার বন্যা, আকস্মিক বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও তাপপ্রবাহ) সময়ে প্রায় ৪ লাখ ৩০ হাজার মানুষের কাছে সহায়তা পৌঁছেছে।
৩. বহুপক্ষীয় টেকনিক্যাল গ্রুপ গঠন: বহুপক্ষীয় অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশন টেকনিক্যাল ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়েছে, যা জাতীয় অগ্রাধিকারের সঙ্গে আরও সুসংগত হয়েছে।
৪. পূর্বাভাস মডেল অন্তর্ভুক্তি: অ্যান্টিসিপেটরি পরিকল্পনায় এল নিনো পূর্বাভাস এবং অন্যান্য পূর্বাভাসমূলক মডেল যুক্ত করা হয়েছে, যা সময়োচিত এবং লক্ষ্যভিত্তিক প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করেছে।
৫. অর্থায়ন সংগ্রহ: অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশন কার্যক্রমের জন্য মোট ১০ দশমিক ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সংগ্রহ করা হয়েছে, যেখানে বহুপক্ষীয় দাতাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমান বলেন, ‘‘২০২৪ সালে আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন করেছি, যা অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশনের গুরুত্ব প্রমাণ করেছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ঘূর্ণিঝড় রেমালের আগে নগদ সহায়তা দিয়ে উপকূলীয় জনগণের ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব হয়েছে, এবং জুলাই মাসের বন্যা ও স্থানীয় দুর্যোগের সময়ে অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশনের সহায়তা বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতি প্রতিরোধে সহায়ক হয়েছে।’’
তবে প্রতিবেদনটি সতর্ক করেছে যে, ২০২৫ সালের জন্য অর্থায়ন ঘাটতি রয়েছে। প্রয়োজনীয় ৪২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে এখনও অর্ধেকের বেশি অর্থের যোগান নিশ্চিত করা যায়নি। বিশেষত বর্ষার বন্যা (২৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার), ঘূর্ণিঝড় (১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) এবং আকস্মিক বন্যার (৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) জন্য অর্থায়ন জরুরি।
প্রতিবেদনটি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশে দ্রুত উন্নয়ন ও পর্যাপ্ত অর্থায়নের গুরুত্ব পুনরায় স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।