বাংলাদেশে প্রথমবার জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। ২০২৩ সালে সংগৃহীত রোগীদের নমুনার পরীক্ষার মাধ্যমে আইসিডিডিআর,বি’র বিজ্ঞানীরা পাঁচজনের মধ্যে ভাইরাসটির সংক্রমণ শনাক্ত করেছেন। এই ঘটনাটি বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন দিক উন্মোচন করে, যা দেশে জিকা ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে।

সোমবার (৩ মার্চ) আইসিডিডিআর,বি’র ওয়েবসাইটে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

১৯৫৪ সালে নাইজেরিয়ায় প্রথম মানুষের মধ্যে শনাক্ত হওয়া জিকা ভাইরাসটি ক্রমবর্ধমান রোগজীবানু হিসেবে পরিচিত। তবে প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে এটি এশিয়া ও আফ্রিকায় শনাক্ত হয়নি। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ২০১৬ সালে আইইডিসিআর-এর গবেষণায় জিকা ভাইরাস সংক্রমণের অস্তিত্ব পাওয়া যায়, যা বাংলাদেশে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাবের আগে ২০১৪ সালে সংগৃহীত একটি নমুনা থেকে প্রমাণিত হয়।

২০২৩ সালে ঢাকার মহাখালীতে আইসিডিডিআর,বি’র রোগ নির্ণয় কেন্দ্রে আসা ১৫২ জন রোগীর নমুনা পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা পাঁচটি নমুনায় জিকা ভাইরাসের সংক্রমণের উপস্থিতি পান। এগুলোর মধ্যে পাঁচজন রোগী পরস্পর এক কিলোমিটারের মধ্যে বসবাস করছিলেন এবং তাদের দেশের বাইরে ভ্রমণের কোনো ইতিহাস ছিল না। এ ধরনের সংক্রমণের সংখ্যা পরিমাপ করতে বাংলাদেশের আরো বড় পরিসরে পরীক্ষা করা প্রয়োজন বলে গবেষকরা উল্লেখ করেন।

জিকা ভাইরাসের লক্ষণ সাধারণত মৃদু হয় এবং এর অনেক ক্ষেত্রে বড় লক্ষণ দেখা যায় না। আক্রান্তদের মধ্যে মাত্র ২০ শতাংশের লক্ষণীয় জ্বরজনিত অসুস্থতা দেখা দেয়। মাথাব্যথা, জ্বর এবং পেশী ব্যথা এর সাধারণ লক্ষণ। তবে, গর্ভবতী নারীদের জন্য এটি খুবই বিপজ্জনক হতে পারে, কারণ এটি মাইক্রোসেফালি বা ভ্রূণের গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে, যা শিশুর মৃত্যু এবং বুদ্ধিবৃত্তিক অক্ষমতার ঝুঁকি বাড়ায়।

জিকা ভাইরাস শুধুমাত্র মশার মাধ্যমে ছড়ায় না, এটি যৌন সম্পর্ক, রক্ত সঞ্চালন এবং প্রসবকালীন সময়েও মা থেকে সন্তানের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যেসব দেশগুলোর মধ্যে জিকার প্রাদুর্ভাব ছিল, সেখানে কাজ করা বাংলাদেশি অভিবাসীরা দেশে ফিরে ভাইরাসটি ছড়ানোর কারণ হতে পারে।

ভাইরাসটির জন্য কার্যকরী নজরদারি এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। তাই, দেশব্যাপী নিয়মিত জিকা ভাইরাস পরীক্ষা এবং রোগ নির্ণয়ের ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ভবিষ্যতে বড় প্রাদুর্ভাব রোধ করা সম্ভব হবে।