বিকাশমান অপরাধ পরিস্থিতির কারণে চলাচলে ভয় পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে, বিশেষ করে রাত ও ভোরে চলাচল করতে ভয় পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। সরকার পরিবর্তনের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল কমে যাওয়ায় অপরাধীরা বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি এসব অপরাধের ঘটনার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পুলিশ এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

গত ৫ আগস্ট থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে ছিনতাইকারীদের হাতে ১৬ জন নিহত হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর তাদের ওয়েবসাইটে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা সম্পর্কিত পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। তবে অনেক ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ নিয়ে যান না, যার ফলে মামলার পরিসংখ্যান অপরাধের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে পারে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র অনুযায়ী, ২০১৯ সাল থেকে ছিনতাইয়ের ঘটনা বাড়ছে। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত মোট ৪৭ হাজারের বেশি অভিযোগ রেকর্ড করা হয়েছে। ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত এই সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৮৮৩টি। ঢাকা মেট্রোপলিটন ও রেঞ্জ এলাকায় সবচেয়ে বেশি ১৫ হাজার ৪১৯টি অভিযোগ রেকর্ড করা হয়েছে।

এছাড়া, ২০২৩ সালে ডাকাতির ঘটনা ছিল ১ হাজার ৫৪৬টি, চুরি ৩ হাজার ৯০টি এবং খুন ৩ হাজার ২৩ জন। ২০২৪ সালে এই পরিসংখ্যান আরো ভয়াবহ হয়ে উঠেছে, যেখানে ডাকাতি ১ হাজার ৯০২টি, চুরি ১১ হাজার ৩১০টি এবং খুন ৩ হাজার ৪৩২ জনে পৌঁছেছে।

এদিকে, পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে তারা ছিনতাই নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। বিশেষত, ছিনতাইয়ের ঘটনা কমাতে সারা দেশে পুলিশ বাহিনীর টহল বাড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরইমধ্যে, ২০ ডিসেম্বর ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে একটি বাসে ডাকাতি এবং ১৮ ডিসেম্বর সায়েদাবাদে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে এক ব্যক্তি নিহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশের হস্তক্ষেপে তদন্ত চলছে।

ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাদ আলী সম্প্রতি রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ছিনতাইয়ের ঘটনা অনেক বেড়ে গেছে এবং অধিকাংশ ছিনতাই মোবাইল ফোন সম্পর্কিত। তিনি আরও বলেন, পুলিশ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে।

বর্তমান সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চেনধুরী বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল কার্যক্রম বৃদ্ধি করে ছিনতাই শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার জন্য পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিশেষত, রাতের সময় ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি ঘটছে, তাই রাতের প্যাট্রলিং বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

এখনও পর্যন্ত পুলিশের দিক থেকে বিষয়টি যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হলেও, অপরাধের এই মাত্রা রোধ করতে আরও কার্যকরী পদক্ষেপের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।