অনলাইন ডেস্ক:
অক্সফামের নতুন এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ব্রিটেন ঔপনিবেশিক শাসনের সময় অখ- ভারত থেকে ৫২ ট্রিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের সম্পদ লুট করেছে। এটি প্রথমবারের মতো একটি আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থার পক্ষ থেকে ঔপনিবেশিক ইতিহাসের ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণের দাবি উত্থাপন করেছে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, প্রতি বছর অন্তত ৫ ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত, যা ধনী ব্যক্তি এবং বৃহৎ কর্পোরেশনগুলোর ওপর কর বৃদ্ধি করে সংগ্রহ করা যেতে পারে।
অক্সফামের প্রতিবেদনে ভারতের অর্থনীতিবিদ উৎসা পটনায়েক ও প্রভাত পটনায়েকের গবেষণার ওপর ভিত্তি করে ব্রিটেনের কাছ থেকে লুট করা সম্পদের পরিমাণ ৫২ ট্রিলিয়ন পাউন্ড হিসাব করা হয়েছে। তারা ২০১৮ সালে দাবি করেছিলেন, ১৭৬৫ থেকে ১৯৩৮ সালের মধ্যে ব্রিটেন ভারতের কাছ থেকে প্রায় ৪৫ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্পদ লুট করেছে। অক্সফাম তাদের প্রতিবেদনটি হালনাগাদ করে এবং ৬৪.৮২ ট্রিলিয়ন ডলার হিসাব করেছে।
অক্সফামের মুখপাত্র জানিয়েছেন, “ঔপনিবেশিক ইতিহাসের প্রভাব বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি বৈষম্যের মূল কারণগুলোর মধ্যে একটি, যা দূর না করলে সমতা প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ভবিষ্যতের জন্য একটি আরও ন্যায়সংগত বিশ্ব গড়ার দিকে নির্দেশিত।”
এদিকে, ব্রিটেনের রাজতন্ত্রের চর্চা অনুযায়ী, ভারতবর্ষ থেকে কোহিনুর হীরাটি ফেরত নেওয়ার দাবি আরও জোরালো হয়েছে ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর। তবে শুধু ভারতই নয়, বিশ্বজুড়ে ব্রিটেনের ঔপনিবেশিক শাসনকালে লুট করা অন্যান্য মূল্যবান সম্পদ ফেরত দেওয়ার দাবিও উঠছে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্য দীর্ঘকাল ধরে পৃথিবীর বিস্তৃত অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করেছিল, এবং এই সাম্রাজ্যের অধীনে বহু মূল্যবান সম্পদ লুটের অভিযোগ রয়েছে।
ব্রিটিশ জাদুঘরে থাকা ৮০ লাখেরও বেশি নিদর্শনের মধ্যে বেশিরভাগই পাচার করা সামগ্রী, এবং ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে ৯টি প্রখ্যাত সাংস্কৃতিক নিদর্শন চুরির অভিযোগ রয়েছে।
অক্সফোর্ড এবং ক্যামব্রিজের কিছু শিক্ষাবিদ এই প্রতিবেদনটির পদ্ধতিগত বিশ্লেষণকে সমালোচনা করেছেন। অক্সফোর্ডের সেন্ট পিটার্স কলেজের অধ্যাপক লরেন্স গোল্ডম্যান বলেছেন, “এটি অত্যন্ত দুঃখজনক যে, একটি খাদ্য সরবরাহ প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্রিটেনের অবদানও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা উচিত, কিন্তু ইতিহাসকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা অমূলক।”
ক্যামব্রিজের সেন্ট জনস কলেজের অধ্যাপক রবার্ট টুমস বলেছেন, “৫২ ট্রিলিয়ন পাউন্ড ঋণের এই হিসাব সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।” তার মতে, “এ ধরনের অমূলক অভিযোগ অক্সফামের প্রতিবেদনটির বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।”