নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) সন্দেহজনক লেনদেন ও অর্থপাচারের মাধ্যমে জমা হওয়া প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা উদ্ধারে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করার উদ্যোগ নিয়েছে। গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে সাবেক মন্ত্রী, এমপি, প্রভাবশালী ব্যবসায়ীসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাড়ে ৩৫০টিরও বেশি অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। এসব অ্যাকাউন্টের মধ্যে বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও রয়েছেন, এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত বিভাগ এবং বিএফআইইউর নির্দেশে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বিএফআইইউ সূত্র জানায়, অর্থপাচার রোধ ও পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। বিএফআইইউর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গ্রুপের বিরুদ্ধে পাচারের তথ্য প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তবে তাদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেওয়া হবে না।” এই কর্মকর্তা আরও জানান, সরকারের এই পদক্ষেপের ফলে দেশে ব্যবসায়ের মালিকানা পরিবর্তিত হতে পারে এবং পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চাওয়া হচ্ছে।
বিএফআইইউর সাবেক প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান বলেন, “বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধার একটি জটিল প্রক্রিয়া, তবে সরকার-টু-সরকার চুক্তি এই প্রক্রিয়া সহজ করতে পারে।” তিনি উল্লেখ করেন, আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘের বিধিবিধান সম্পদ পুনরুদ্ধারে চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে, তবে বাংলাদেশ যদি আন্তর্জাতিক আদালতে প্রমাণিত করতে পারে যে ওই অর্থ অবৈধভাবে অর্জিত, তবে তা উদ্ধার করা কিছুটা সহজ হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরি আন্তর্জাতিক আর্থিক আইনের জটিলতা নিরসনে একটি শক্তিশালী আইনি দলের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, “বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত পেতে সরকারের দৃঢ় সংকল্প ও ধৈর্যের পাশাপাশি একটি শক্তিশালী আইনি লড়াইয়ের দল দরকার।” তিনি আরও বলেন, “অর্থ পাচারকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দিলে এ প্রথা অব্যাহত থাকবে।”
সূত্র জানায়, স্থগিত করা অ্যাকাউন্টগুলোর বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত মালিকদের মালিকানায় থাকবে। মুজেরি পরামর্শ দেন, বাজেয়াপ্ত তহবিলগুলো অভিযুক্তদের কর্মকাণ্ডে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। বর্তমানে বিএফআইইউ সিআইডি, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং কর গোয়েন্দাদের সঙ্গে যৌথভাবে প্রমাণ সংগ্রহ ও আইনি মামলা পরিচালনার কাজ করছে। সরকারের এই পদক্ষেপ অর্থপাচার রোধ এবং চুরি হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধারে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।