বিএসএফের বাধায় কুশিয়ারা নদী থেকে পানি প্রত্যাহারে সমস্যা, সিলেট অঞ্চলের কৃষি ক্ষতিগ্রস্ত

জেলা প্রতিনিধি :

শুষ্ক মৌসুমে কুশিয়ারা নদী থেকে বাংলাদেশের প্রতিবছর ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহারের চুক্তি থাকা সত্ত্বেও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের বাধার কারণে রহিমপুরী পাম্প হাউস চালু করা যাচ্ছে না। এর ফলে, সিলেট জেলার জকিগঞ্জসহ চার উপজেলার পানি সরবরাহে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। কুশিয়ারা নদী এবং রহিমপুরী খালের সংযোগস্থল খনন করতে না পারায় এই অঞ্চলের সেচ সুবিধা ব্যাহত হচ্ছে এবং হাজার হাজার একর জমি অনাবাদি পড়ে রয়েছে।

২০১১ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) রহিমপুরী খাল খনন এবং পাম্প হাউস স্থাপন কাজ শুরু করেছিল। ২০১৬ সালে প্রকল্পটি শেষ হলেও বিএসএফের বাধার কারণে খাল খনন কাজ করতে না পারায় প্রকল্পটি থমকে যায়। পরবর্তীতে ২০২২ সালে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে কুশিয়ারা নদী থেকে রহিমপুরী খাল দিয়ে পানি প্রত্যাহারের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় চুক্তিটি আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পাদিত হয়।

তবে চুক্তির পরও বিএসএফের বাধার কারণে পাম্প হাউস চালু করা সম্ভব হয়নি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এই বাধার কারণে কৃষি ও মৎস্য উৎপাদন বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে। সিলেট জেলার সবচেয়ে কৃষিনির্ভর উপজেলা জকিগঞ্জে শুষ্ক মৌসুমে প্রচুর ধান ও রবি শষ্য উৎপাদন হত, কিন্তু খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় সেচ সুবিধা এখন আর পাওয়া যাচ্ছে না।

পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ জানান, “বিএসএফের বাধার কারণে রহিমপুরী খালের উৎসমুখ খনন করা সম্ভব হচ্ছে না, তাই পাম্প হাউস চালু করা যাচ্ছে না।” তিনি আরও বলেন, “এ কারণে জকিগঞ্জসহ সিলেটের ৫ উপজেলার কৃষি ও মৎস্য উন্নয়নে যে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল, তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না।”

স্থানীয়দের মতে, চুক্তি অনুযায়ী যদি রহিমপুরী খাল থেকে কুশিয়ারা নদীর পানি প্রত্যাহার করা যেত, তবে শুষ্ক মৌসুমেও এসব খাল ও হাওর-বিলগুলো পানিতে পূর্ণ থাকতো, যা সেচ কাজে ব্যবহৃত হতে পারত এবং মৎস্য উৎপাদন বাড়াতো। এর ফলে ওই অঞ্চলের কৃষি ও মৎস্য উৎপাদন অনেক বেশি উন্নত হতো এবং বন্যার শঙ্কাও কমতো। এছাড়া, পানি পাশের তিন উপজেলা বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ এবং কানাইঘাটের জলাশয়ে নামতো, যার ফলে ওই অঞ্চলের কৃষিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়তো।