জেলা প্রতিনিধি :
জুলাই মাসে গণঅভ্যুত্থানের সময় যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত মো. আশিকুর র রহমান হৃদয় (১৭) শুক্রবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিকাল ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
হৃদয় বাউফল উপজেলার পশ্চিম যৌতা গ্রামের রিশকাচালক আনসার হাওলাদারের ছেলে। তার পরিবার জানায়, হৃদয় ঢাকাতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন এবং ১৮ জুলাই ঢাকার রাজপথে আন্দোলনে অংশ নেন। সেই সময় যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশের গুলিতে তিনি মাথায় তিনটি গুলিবিদ্ধ হন। প্রথমদিকে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকারের আতঙ্কে তিনি গোপনে চিকিৎসা নেন, তবে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর তাকে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা তার মাথা থেকে দুটি গুলি বের করতে সক্ষম হলেও, তৃতীয় গুলি বের করা সম্ভব হয়নি। এতে হৃদয় পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি এবং দীর্ঘদিন ধরে অস্থিরতা ও জ্বরে ভুগছিলেন। গত বুধবার তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয় এবং শুক্রবার বিকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
হৃদয়ের বাবা আনসার হাওলাদার জানান, তিনি ছেলে হৃদয়ের উন্নত চিকিৎসা করাতে পারেননি। নিজের রিকশা ও গরু বিক্রির টাকা দিয়ে যতটুকু সম্ভব সাহায্য করেছেন, তবে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ থাকলে তার ছেলে বেঁচে থাকতেন।
হৃদয়ের বড় ভাই মো. সোহাগ ইসলাম আনিস বলেন, “আমার ভাই দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিল। তার মাথায় একটি গুলি ছিল, যেটি বের করা সম্ভব হয়নি। এজন্য সে প্রচুর কষ্ট পেত। কেউ তার উন্নত চিকিৎসার জন্য এগিয়ে আসেনি, এবং চিকিৎসার অভাবে আমার ভাই মারা গেছে।”
এ বিষয়ে বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আব্দুর রউফ জানান, “হৃদয়কে দুপুর ১২টার দিকে হাসপাতালে আনা হয়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছিলাম, কিন্তু পরিবার যথাসময়ে তাকে সেখানে নিতে পারেনি। এরপর বিকাল ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়।”
এ ঘটনা এলাকাবাসীর মধ্যে শোকের ছায়া ফেলেছে, এবং হৃদয়ের পরিবারের প্রতি সহানুভূতির ঝড় উঠেছে।